যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুটি ছিল সবচেয়ে গর্হিত অপরাধীদের শাস্তিস্বরূপ।
যীশুর এই ঘটনাটিতে, দেখা যাচ্ছে সকলেই এর সাথে জড়িত ছিল। যিহুদি ধর্মগুরুরা, অযিহুদি রোমীয় সরকার এবং যীশুর মৃত্যুর সমর্থনকারী সকল গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা।
কেন?
এই সবকিছুর শুরু হয়েছিল ইস্রায়েলের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে, যেটি যিরুশালেম থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। যীশু ৩০ বছর বয়সেই লোকদেরকে জীবন এবং ঈশ্বর সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন।
জনতা তাঁর আশেপাশে ভিড় করছিল। যীশুর সম্বন্ধে সকল কিছুই ধর্মীয় নেতাদের থেকে লক্ষ্যণীয়ভাবে ভিন্নতর ছিল। তিনি শুধুমাত্র সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকেই আপন করে নেন নি, বরং তিনি ব্যভিচারীনিদের, দরিদ্রদের, পীড়িত এবং সমাজচ্যুতদেরকেও আপন করে নিয়েছিলেন।
যীশু লোকদেরকে তাঁর উপর বিশ্বাস আনতে বলতেন এই ধরণের উক্তির মাধ্যমে, ‘‘আমিই জগতের আলো। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের আলো পাবে।”১
কেন লোকেরা যীশুর কথা শুনত? এর কারণ হল তারা স্বচক্ষে তা দেখত।
‘‘যীশু শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে যিহূদীদের সমাজ- ঘরে শিক্ষা দিতে ও স্বর্গ-রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন।’’২ অন্ধরা দেখতে পেল, খঞ্জরা হাঁটতে পারল, কুষ্ঠ রোগীরা কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্তি লাভ করল।
তিনি একটি ডালায় মাছ ও রুটি দিয়ে নিঃস্ব ৪০০০ লোককে খাইয়েছিলেন। এরপর তিনি এমন কাজ ৫০০০ লোকের মধ্যে আবারও করেছিলেন।
প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে যীশু দাঁড়িয়েছিলেন এবং বাতাসকে শান্ত হতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, এতে হঠাৎ করেই বাতাস শান্ত হয়ে গিয়েছিল। নৌকার লোকেরা আশ্চর্য হয়ে বলে, ‘‘ইনি কেমন লোক যে, বাতাস এবং সাগরও তার কথা শোনে? ’’৩
তিনি বেশকয়েকবার মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন। লোকেরা যে যীশুকে অনুসরণ করত এবং তাঁর বিষয়ে কথা ছড়িয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক বিষয় ছিল।
যীশু যখন লোকদেরকে শিক্ষা দিতেন তখন তিনি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের শাসকদেরও সমালোচনা করতেন। তারা তাদের অবস্থানকে অস্বীকার করে, তাদের আচার-অনুষ্ঠান, আইন এবং ঐতিহ্যের প্রতি জোরপূর্বক আনুগত্যতা দেখাচ্ছিলেন।
যীশু তাদের বলতেন, ‘‘তাঁরা ভারী ভারী বোঝা বেঁধে মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেন... ’’৪
আর তিনি তাদেরকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন,‘‘আপনারা ভন্ড! আপানাদের বিষয়ে যিশাইয় ঠিক কথাই বলেছিলেন। তার বইয়ে লেখা আছে এই লোকেরা মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে; তারা মিথ্যাই আমার উপাসনা করে, তাদের দেওয়া শিক্ষা মানুষের তৈরী কতগুলো নিয়ম মাত্র।’’৫
উদাহরণস্বরূপ, বিশ্রামবারে কোন কাজ না করা ছিল তাদের ধর্মীয় আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম। রান্না না করা, বেশিদূরের পথ না হাঁটা, কোন জিনিস বহন না করা, ইত্যাদি। এটা বিশ্রামপূ থেকে নিষেধমূলক বেশি ছিল।
বিশ্রামবারে যীশু এমন একজন লোককে সুস্থ করেন যিনি ৩৮ বছর ধরে অবশ রোগী ছিলেন। তিনি সেই লোকটিকে বলেছিলেন তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও। সেই লোকটি ৩৮ বছর পর প্রথমবারের মত উঠে দাঁড়িয়েছিল, সে হাঁটতে পারছিলো। ফরিশীরা তাকে দেখল এবং বলল, ‘‘ এটা বিশ্রামবার, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়ানোটা আইনবিরোধী।’’
যীশু অনবরত লোকদেরকে সুস্থ করে চলছিলেন। তিনি বিশ্রামবারেও থামেন নি।
যখন ফরিশীরা যীশুর লোকেদেরকে সুস্থ করা নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল তখন তিনি বললেন, “আমার পিতা সব সময় কাজ করছেন এবং আমিও করছি।
আমাদেরকে বলা হয়েছে, ‘‘যীশুর এই কথার জন্য যিহূদী নেতারা তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন, কারণ তিনি যে কেবল বিশ্রামবারের নিয়ম ভাঙছিলেন তা নয়, ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে ডেকে নিজেকে ঈশ্বরের সমানও করছিলেন।’’৬
যীশু বলেছেন তাঁকে জানাই হল ঈশ্বরকে জানা।৭ তাঁকে দেখা মানে হল ঈশ্বরকেই দেখা।৮ তাঁকে বিশ্বাস করাই হল ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা।৯ তাঁকে গ্রহণ করাই হল ঈশ্বরকে গ্রহণ করা।১০ তাঁকে ঘৃণা করা মানে ঈশ্বরকেই ঘৃণা করা।১১ আর তাঁকে সম্মান করা মানে হল ঈশ্বরকেই সম্মান করা।১২
বিশাল এক জনতা যীশুকে অনুসরণ করছিল বিধায়, যিহুদি ফরিসীরা এবং সদ্দকীরা যীশুর পিছু পিছু যাওয়া ত্যাগ করা এবং লোকদের উপর তাদের কর্তৃত্বকে পুনরায় পাবার সিদ্ধান্ত নিল।
তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করল এবং মহাপুরোহিতের কাছে নিয়ে গেল যেখানে মহাপুরোহিত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,‘‘তুমিই কি পরমধন্য ঈশ্বররের পুত্র মশীহ্?’’
যীশু বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্রকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আকাশে মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”১৩ (এখানে শেষ বিচারের কথা বলা হয়েছে, যেটি যীশু সম্পন্ন করবেন বলে বলেছিলেন।)
মহাপুরোহিত তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ঈশ্বরনিন্দা, নিজেকে ঈশ্বর দাবী করার দোষে অভিযুক্ত করলেন। আর তারা সকলেই যীশুকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন।
যেহেতূ যিহূদি আইন মৃত্যুদন্ড সমর্থন করে না, সেহেতূ ধর্মীয় নেতারা যীশুকে অযিহূদী রোমান শাসনকর্তার কাছে নিয়ে গেল এবং মৃত্যুদন্ডের দাবি করতে লাগল। (সুতরাং, যিহূদি এবং অযিহূদি উভয়েই যীশুর মৃত্যুর সাথে জড়িত ছিল।)
পন্তিয় পীলাত, যিনি ছিলেন সেই জায়গার রোমের একজন উপযুক্ত (শাসনকর্তা) তার চূড়ান্ত বক্তব্য বলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যীশুকে মুক্ত করে দেয়া উচিত। কিন্তু ফরিশী এবং সদ্দকীরা জনতার সামনে উজ্জীবিত হয়ে উঠল এবং তাদেরকে যীশুর মৃত্যুদন্ডের দাবি জানানোর জন্য উস্কানি দিকে লাগল। লোকেরা এই বলে চিৎকার করতে লাগল, ‘‘ওকে ক্রুশে দিন! ওকে ক্রুশে দিন! জনতা যা চাচ্ছিল পীলাত তাই করলেন।
রায় হল: ক্রুশীয় মৃত্যু, রোমান সরকারের নিপীড়নমূলক শাস্তি এবং মৃত্যু।
এসব কোন কিছুই যীশুর কাছে চমকপ্রদ ছিল না। বহুবার, তাঁর ক্রুশারোপনের পূর্বে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, পেটানো হবে এবং ক্রুশে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেছিলেন যে কবরস্থ হওয়ার তিন দিন পর তিনি আবারও জীবিত হবেন। যীশু তাঁর নিজের সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তা তাঁর স্বশরীরে জীবিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে।
সৈন্যরা যীশুকে ধরে নিয়ে গেল, তারা বড় কাঁটাযুক্ত লতা দিয়ে একটি বিদ্রুপস্বরূপ মুকুট বানালো এবং যীশুর মাথায় চেপে ধরে তাঁকে মারল।
তারপরে তারা যীশুকে বেড়ালের লেজের মত চাবুক দিয়ে আঘাত করল, এমন একটি চাবুক যাতে অনেকগুলো হাড়ের মত বা ধারালো ধাতব কাঁটা সংযুক্ত ছিল। চল্লিশ ঘা আঘাত একজন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল।
তারা যীশুকে হাতের কব্জি এবং পায়ে পেরেক দিয়ে তাঁকে ক্রুশে ঝুলিয়েছিল এবং তিনি ধীর শ্বাসকষ্ট এবং হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তিনি সত্যিই মারা গেছেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।
যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু শুধুমাত্র তাঁর অলৌকিক ঘটনা এবং বাণীগুলোর স্বাভাবিক পরিণতি ছিল না। তাঁর প্রতি তাদের একটুকুও মায়া ছিল না।
যীশু ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছিলেন যে প্রকৃতি, রোগ এমনকি মৃত্যুর ওপর তাঁর অসীম ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বহু লোককে সুস্থ করেছিলেন, এমনকি অনেক লোকদেরকে মৃত্যু থেকে জীবিতও করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যীশু ক্রুশে থাকাকালীন অবস্থায় যেকোন সময়েই নিজেকে মুক্ত করতে পারতেন।
এটি ছিল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি পানির নীচে মাথা দিয়ে রেখেছে এবং যে কোন সময়ে তাঁর মাথা উঠানোর ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের মাথাকে ডুবন্ত অবস্থায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যীশু মৃত্যুবরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে, যীশু বলেছিলেন, ‘‘কেউই আমার প্রাণ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে না, কিন্তু আমি নিজেই তা দেব।’’১৪ তিনি এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছেন। এটা পরিকল্পিত ছিল। ইচ্ছাকৃত ছিল।
ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা এমন কিছু কাজ করি যেটি ঈশ্বর বিরোধী। প্রতিদিনের কিছু ছোট খবরগুলোতে আমরা দেখি... বৈষম্য, খুন, যৌন নির্যাতন, মিথ্যা, লোভ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ইত্যাদি আরও কত কিছু। মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের জীবন যাপনের বিশৃঙ্খলার সাথে সাথে অন্যের জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছি। ঈশ্বর আমাদেরকে আমাদের কাজগুলোর জন্য, পথভ্রষ্ট, অন্ধ হিসেবে তাঁর বিচারের আওতাধীন হিসেবে বিবেচনা করেন।
একটু ভেবে দেখুন যে, একটি ছয় বছর বয়সী শিশু মেয়েকে তার পরিবার থেকে যৌন নির্যাতনের জন্য অপহরণ করা হয়েছে শুনে আমরা কতটা অসুস্থ ও শোকাহত হয়ে পড়েছি! এটি আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের কতটা অধ:পতন যে, যারা এর শাস্তিমূলক মৃত্যুর বিরোধীতা করছে তাদেরকেও প্রলোভিত করা হয়।
আসলে, আমাদের সকল পাপ পবিত্র ঈশ্বরের আপমান করে। আমাদের সকল পাপ তাঁকে কষ্ট দেয়। আমরা নিজেদের মান অনুযায়ীই জীবন-যাপন করতে পারি না, আর তাঁর মান অনুযায়ী বাঁচা তো অনেক দূরের কথা। সৎ থাকাকালীন অবস্থায়, এমনকি আমরা নিজেদের প্রতি আমাদের মাঝে মাঝে বিরাগ জন্মায়। তাহলে একজন নিখুঁত পবিত্র ঈশ্বর আমাদেরকে কিভাবে দেখবেন?
পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু১৫ এই কারণে, আপনি দেখবেন যে পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দরকে প্রতি বছর তাদের পাপের ক্ষমা পাবার জন্য একটি ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই ভেড়ার বাচ্চা তাদের পরিবর্তে উৎসর্গিকৃত হতো। কিন্তু এটা অস্থায়ী ক্ষমা ছিল। তাদেরকে প্রত্যেক বছরই এই উৎসর্গ করতে হতো।
যখন যীশু আসলেন, ভাববাদী যোহন বাপ্তাইজক যীশুর সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘‘ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষ-শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন।’’১৬
যীশু মানবজাতির পাপের জন্য আমাদের বদলে শাস্তিভোগ করেছিলেন। আমরা যাতে আমাদের মৃত্যু এবং চিরকালের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে না যাই সেজন্য যীশু আমাদের পাপের জন্য ক্রুশে বলি হলেন যাতে আমরা চিরকাল ক্ষমাযোগ্য হই এবং অনন্ত জীবন লাভ করতে পারি।
এই কারণেই যীশু এসেছিলেন, আমাদের মুক্তিদাতা হিসেবে, শেষ বিচারের দিন থেকে আমাদের রক্ষা করতে, দন্ডাদেশ এবং আমাদের পাপ থেকে মুক্ত করতে। আপনি যে পাপ কাজই করেছেন বা করবেন, সে সব কিছুই যীশু ক্রুশে থাকাকলীন সময়ে জানতেন। যীশু আমাদের পাপের শাস্তি নিজে ভোগ করেছেন।
আপনি নিশ্চয়ই লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত ‘‘শেষ ভোজ’’ ছবিটি দেখেছেন যেখানে যীশু একটি লম্বা টেবিলে বসে আছেন এবং তাঁর শিষ্যরাও তাঁর উভয় পাশে বসে আছেন। দা ভিঞ্চি যীশুর গ্রেপ্তার ও ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগের রাতে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে যে নৈশভোজ করেছিলেন তা চিত্রিত করেছিলেন।
সেই ‘‘শেষ ভোজে’’ যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে ‘‘এ আমার রক্ত যা অনেকের পাপের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে।’’১৭
যীশু, যিনি কোন পাপ করেন নি, তিনিই আমাদের পাপের জন্য ক্রুশে বলি হলেন। এটা ন্যায্য নয়। আমাদের জায়গা নেওয়ার জন্য আমরা তার যোগ্য ছিলাম না। তিনিই কেন এ কাজ করবেন?
আমাদের বলা হয়েছে, ‘‘ঈশ্বর যে আমাদের ভালবাসেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা পাপী থাকতেই খ্রীষ্ট আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।’’১৮
তিনি আমাদের কাছ থেকে কি চান? তাঁর কৃতজ্ঞতা স্মরণ করা এবং আমাদের ক্ষমার জন্য আমরা কি করতে পারি? না। তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন আমরা সেটার যোগ্য নই। তিনি আমাদের কাছ থেকে সহজ একটি বিষয় চান... তাঁকে বিশ্বাস করা। তিনি চান যেন আমরা আমাদের পরিবর্তে তাঁর মৃত্যুকে গ্রহণ করি, তাঁর সম্পূর্ণ ক্ষমাকে একটি বিনামূল্যের উপহার হিসেবে গ্রহণ করি।
আশ্চর্যের ব্যাপার, আমরা অনেকেই এটা করতে চাই না। তারা নিজেদের পরিত্রাণ নিজেরাই অর্জন করতে চায়। তাদের নিজস্ব উপায়ে তারা স্বর্গে যেতে চায়। তারা তাদের প্রচেষ্টার দ্বারা এটা প্রকাশ করতে চায় যে তারা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্য। যীশু বলেছেন তারা তাদের পাপ এবং সম্মুখ বিচারের জন্য মরবে, কারণ যীশু তাদের জন্য যা করেছেন তারা তা অস্বীকার করে।
যীশুর শিষ্য পিতর যীশু সম্পর্কে বলেছেন,‘‘ তাঁর উপরে যারা বিশ্বাস করে তারা প্রত্যেকে তাঁর গুণে পাপের ক্ষমা পায়।’’১৯
কিন্ত শুধুমাত্র ক্ষমাই নয়, তারা অনন্ত জীবন এবং এই জীবনকালেই তারা ঈশ্বরের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। এর সম্পূর্ণটাই আমাদের, কারণ যীশু আমাদের জন্যই ক্রুশে বলি হয়েছেন।
যীশু শুধুমাত্র আমাদের পাপের শাস্তি নেন নি। তিনি আমাদের এবং ঈশ্বরের মধ্যাকার দেয়ালকে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি ক্ষমার চাইতেও বেশি কিছু আমাদের দিতে চেয়েছেন। তিনি পুনর্মিলন, সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা, তাঁর সাথে পূর্ণ একটি সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন যাতে করে আমরা তাঁর ভালবাসা সম্বন্ধে জানতে পারি।
এটা এমন একটি বিষয় যেখানে একজন ধনকুব তার কাছে ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির ঋণ শুধু নাকোচই করে দেন নি বরং যেই ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেন নি তাকেই তার সকল সম্পত্তি দিয়ে দিয়েছেন।
অনন্ত জীবন, স্বর্গ, হল বিনামূল্যের উপহার। ‘‘পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু, কিন্তু ঈশ্বর যা দান করেন তা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন।’’২০
যীশু এই জগতে আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন, যাতে আমরা তাঁকে আরও গভীরভাবে জানতে পারি। তিনি আমাদের কাছ থেকে যা চাচ্ছেন সেটি হল তার সাথে সম্পর্কের উপহারটি গ্রহণ করা এবং এর সম্পূর্ণটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
যীশু এটিকে এভাবে সংক্ষিপ্তসার করেছেন, ‘‘আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।’’২১
যে কেউ যীশুকে তাদের জীবনে আমন্ত্রণ জানায় এবং তাঁর বিনামূল্যের ক্ষমার উপহার গ্রহণ করে এবং অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তিই তাঁর সাথে এমন সম্পর্ক তৈরী করতে পারবে যে সম্পর্ক কখনও শেষ হবার নয়।
তাঁর ক্রুশারোপনের পর, তারা যীশুকে একটি কবরে কবরস্থ করল এবং তাঁর কবরের পাশে দক্ষ রোমীয় সৈন্যদের দিয়ে পাহাড়া দেওয়া হল। কেন? যীশু অনেকবার বলেছেন যে তাঁর মৃত্যুর তিন দিন পর, তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হবেন। এতে করে তিনি নিজের সম্বন্ধে যা যা বলেছিলেন এটা তা সত্য বলে প্রমাণ করে দিত।
তিনি দিন পর, তাঁর কবর খালি ছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের কাছে অনেকবার স্বশরীরে দেখা দিয়েছেন, ৫০০ জন লোকের জনতার মধ্যে, আলাদা আলাদা ব্যক্তির কাছে। যীশুর প্রত্যেক শিষ্যই সারা জগতে তাঁর পুনরুত্থানের কথা ঘোষণা করেছেন। তারা প্রত্যেকে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এজন্য বিভিন্ন জাগায়, একে অন্যের থেকে ভিন্নভাবে শহীদ হয়েছেন।
যোহন বাইবেলে এই বিষয়টি বেশ ভালভাবেই ব্যক্ত করেছেন যে, ‘‘ আমরা জানি ঈশ্বর আমাদের ভালবাসেন, আর তাঁর ভালবাসার উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা। ভালবাসার মধ্যে যে থাকে সে ঈশ্বরের মধ্যেই থাকে এবং ঈশ্বর তার মধ্যে থাকেন। এইভাবেই ভালবাসা আমাদের অন্তরে পূর্ণতা লাভ করে, যেন বিচারের দিনে আমরা সাহস পাই, কারণ এই জগতে আমাদের জীবন তাঁরই জীবনের মত।’’২২
যীশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন,‘‘আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, আমার কথা যে শোনে এবং আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে বিশ্বাস করে তার অনন্ত জীবন আছে। তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে।’’২৩
যীশু তাঁর মৃত্যুর আগে এই প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘ ন্যায়বান পিতা, জগতের লোকেরা তোমাকে জানে না কিন্তু আমি তোমাকে জানি। আর তুমিই যে আমাকে পাঠিয়েছ এরা [যীশুর অনুসারীরা] তা বুঝতে পেরেছে। আমি তাদের কাছে তোমাকে প্রকাশ করেছি এবং আরও প্রকাশ করব, যেন তুমি আমাকে যেভাবে ভালবাস সেই রকম ভালবাসা তাদের অন্তরে থাকে, আর আমি যেন তাদের সংগে যুক্ত থাকি।’’২৪
আপনি কি এখনই যীশুকে আপনার জীবনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন? নি¤œলিখিত উপায়ে আপনি তা করতে পারেন:
‘‘যীশু, আমি তোমাকে আমার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আমার পাপ ক্ষমা কর। আমার জন্য ক্রুশে প্রাণ দেবার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই আমার জীবন পরিচালনা কর। এই মুহূর্তে আমার জীবনে আসার জন্য এবং তোমার সাথে আমাকে এই বন্ধন স্থাপন করতে দেবার জন্য তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমেন।’’
যদি আপনি যীশুকে আপনার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করে থাকেন, তাঁর ক্রুশারোপন যদি আপনার কাছে উপহারস্বরূপ মনে হয় এবং আপনি যদি তা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আপনি ক্ষমা পেয়েছেন, এবং তাঁর সাথে অনন্তকালীন সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছেন। নিচের লিংকগুলোর মাধ্যমে আপনি ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারবেন।
পাদটীকাসমূহ: (১) যোহন ৮:১২ (২) মথি ৯:৩৫ (৩) মার্ক ৪:৪১ (৪) মথি ২৩:৪ (৫) মথি ১৫:৯ (৬) যোহন ৫:১৮ (৭) যোহন ৮:১৯ (৮) যোহন ১২:৪৫; ১৪:৯ (৯) যোহন ১২:৪৪; ১৪:১ (১০) মার্ক ৯:৩৭ (১১) যোহন ১৫:২৩ (১২) যোহন ৫:২৩ (১৩) মার্ক ১৪:৬১,৬২ (১৪) যোহন ১০:১৮ (১৫) রোমীয় ৬:২৩ (১৬) যোহন ১:২৯ (১৭) মথি ২৬:২৮ (১৮) রোমীয় ৫:৮ (১৯) প্রেরিত ১০:৪৩ (২০) রোমীয় ৬:২৩ (২১) যোহন ১৪:৬ (২২) ১ম যোহন ৪:১৬,১৭ (২৩) যোহন ৫:২৪ (২৪) যোহন ১৭:২৫,২৬