জস ম্যাকডুয়েল এর লেখা
আমি খুশি হতে চেয়েছিলাম। আমি সমগ্র বিশ্বের অন্যতম একজন সুখী মানুষ হতে চেয়েছিলাম। জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য আমার আকাঙ্খা ছিল। আমি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিলাম:
এই সবকিছুর উর্ধ্বে আমি স্বাধীন হতেও চেয়েছিলাম। আমি সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুখী মানুষ হতে চেয়েছিলাম। আমার কাছে স্বাধীনতা বলতে সাধারণভাবে যা ইচ্ছা তাই করা নয়—যে কেউই এটা করতে পারে। আমার কাছে স্বাধীনতা বলতে আপনার যা করা উচিত সেটা করার ক্ষমতা থাকাকে বোঝায়। বেশিরভাগ লোকই জানে তাদের কী করা উচিত কিন্তু তাদের সেটা করার ক্ষমতা থাকে না। তাই আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিলাম।
বেশিরভাগ লোকেরাই কোন না কোন ধর্মের সাথে জড়িত, তাই আমি এইদিকেই গেলাম এবং গীর্জায় যেতাম। আমি হয়ত অবশ্যই ভুল গীর্জায় গিয়েছি, কারণ এটা আমাকে আরও খারাপ লাগাতে শুরু করেছিল। আমি সকাল, দুপুর, বিকেলে গীর্জায় গিয়েছি, কিন্তু এতে কোন উপকার হয় নি। আমি খুবই বাস্তববাদী, আর যখন কোন কিছু ঠিকমত কাজ না করে, তখন আমি সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিই। তাই আমি ধর্মত্যাগ করলাম।
আমি এটা ভেবে বিস্মিত হওয়া শুরু করেছিলাম যে এর উত্তর কি খ্যাতি হবে কিনা। আমি ভেবেছিলাম একজন নেতা হিসেবে, কিছু কারণ মেনে নিয়ে, সেগুলোর প্রতি নিজেকে নিবেদিত করে, এবং নিজেকে খ্যাতিসম্পন্ন করে গড়ে তুললে হয়ত কিছু একটা হতে পারে। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম, সেখানে ছাত্র নেতারা তাদের টাকার থলে উল্টো করে তার মধ্যে থাকা টাকা আশোপাশে ছুঁড়ে মারত। তাই আমি ক্লাসে নবীনদের মধ্যে সভাপতি হবার জন্য গেলাম এবং আমি নির্বাচিত হলাম। সবাই আমাকে চিনবে এটা আমার কাছে দারুণ বিষয় ছিল, কারণ আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আমি যে বক্তাদের বাছাই করব তাদের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে খরচ করতে পারব। এটা দারুণ ছিল, কিন্তু যা কিছু আমি চেষ্টা করেছি তা বৃথা ছিল। আমি সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠতাম(প্রায়সময়ই মাথাব্যাথা থাকত, কারণ এর আগের রাতে আমি মদ্যপান করতাম) এবং আমার আচরণ ছিল এমন,‘‘ দেখ, সামনে আবার পাঁচদিন শুরু হতে যাচ্ছে।’’ আমি সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তা সহ্য করতাম। আমার জন্য সুখ ছিল সপ্তাহে তিনবার—শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার। তারপর এই দোষযুক্ত চক্র আবারও চলতে থাকত।
আমি ধারণা করি যে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মক্ষেত্রে আমার মত অনেক লোকই জীবনের অর্থ, সত্যের অন্বেষণ এবং উদ্দেশ্য খুঁজছিল।
সেই সময়ে আমি ছোট একটি দলকে লক্ষ্য করি—আটজন শিক্ষার্থী এবং দুইজন অনুষদের সদস্যরা। তাদের জীবন-যাপনে কিছু না কিছু আলাদা রয়েছে। তাদের দেখে মনে হয়েছিল তারা যা বিশ্বাস করে সে বিষয়ে তারা জানে। তাদের দেখে এটাও মনে হয়েছিল যে তারা কোথায় যাচ্ছে সেটাও তারা জানে।
যে সমস্ত মানুষদেরকে আমি লক্ষ্য করা শুরু করলাম তারা শুধুমাত্র ভালবাসার বিষয়েই কথা বলেনি—তারা সেটার সাথে যুক্তও ছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিস্থিতিগুলোর উর্ধ্বে অবস্থান করছিল। অন্য সবাইকে স্তূপের নিচে ঢাকা মনে হলেও তাদের কাছে একটি বিষয়বস্তু, শান্তিপূর্ণ অবস্থা ছিল যা কোন পরিস্থিতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় নি। তাদের মধ্যে আনন্দের এক অন্তর্নিহিত এবং ধারা প্রবাহমান ছিল। তারা মহাখুশি ছিল। তাদের কাছে এমন কিছু ছিল যা আমার কাছে ছিল না।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত, যখন কারও কাছে এমন কিছু ছিল যা আমার কাছে ছিল না, তখন আমি সেটা পাবার জন্য আকাঙ্খিত ছিলাম। তাই আমি এই ধরণের কুচুটে মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই সিদ্ধান্ত নেবার দুই সপ্তাহ পর আমরা সবাই ছাত্র সংঘে গোল করে বসে ছিলাম—ছয়জন শিক্ষার্থী এবং অনুষদের দুই জন সদস্য। এই কথোপকথনটি ঈশ্বরের কাছাকছি থাকা নিয়ে শুরু হয়।
তারা আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল, তাই অবশেষে আমি ছাত্রদের মধ্যে একজনকে খুঁজলাম, একজন সুন্দরী মহিলা (আমি ভাবতাম যে সব খ্রীষ্টিয়ানরাই কুৎসিত); আর আমি আমার চেয়ারে হেলান দিলাম (আমি যে এ বিষয়ে উৎসাহী এ বিষয়ে আমি কাউকে বলতে চাই নি) আর আমি বললাম,‘‘ আমাকে বলুন, কি আপনাদের জীবন পরিবর্তন করেছে? এই বিদ্যায়তনে সবার চাইতে আপনাদের জীবন কেন আলাদা?’’
সেই যুবতী মহিলার নিশ্চয়ই অনেক দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। তিনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালেন এবং দুইটি শব্দ বললেন যেটা এই বিদ্যায়তনে এমন একটি সমাধান শোনার জন্য কখনও ভাবিনি, আর সেটা হল: ‘‘যীশু খ্রীষ্ট।’’
আমি বললাম, ‘‘ওহ, ঈশ্বরের দোহাই আমাকে এইসব ফালতু কিছূ বলো না। আমি ধর্ম নিয়ে খুবই বিরক্ত। আমি গীর্জা নিয়ে বিরক্ত। আমি বাইবেল নিয়েও বিরক্ত। ধর্ম নিয়ে আমাকে এই সব ফালতু কিছু বলো না।’’
সেও প্রতিউত্তর করে বলল,‘‘আমি ধর্মের বিষয়ে বলিনি, আমি বলেছি যীশু খ্রীষ্ট।’’ তিনি এমন কিছু তুলে ধরল যা আমি এর আগে কখনও জানতাম না: খ্রীষ্টিয়ানিটি কোন ধর্ম না। ধর্ম হল সেটাই যেখানে মানুষ তাদের ভাল কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে চায়; খ্রীষ্টিয়ানিটি হল ঈশ্বর যীশুর মাধ্যমে পুরুষ এবং মহিলার কাছে তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য নিজে এসেছেন।
হয়ত বিশ্বের অন্যান্য জায়গার চাইতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খ্রীষ্টিয়ানিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ধারণা রয়েছে। কিছুদিন আগে আমার একজন সহকারী শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল যিনি স্নাতক সেমিনারে মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘‘যে কেউ গির্জার ভেতরে পা রাখে সে একজন খ্রীষ্টান।’’ আমি উত্তরে বললাম,‘‘ কোন গাড়ির গ্যারেজে পা রাখলেই কি কেউ গাড়ি হয়ে যায়?’’ আমাকে বলা হয়েছিল যে কেউ সত্যিকারভাবে যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে সেই একজন খ্রীষ্টিয়ান।
যেহেতূ আমি খ্রীষ্টিয়ানিটি নিয়ে বিচারিত হচ্ছিলাম সেহেতূ আমার বন্ধুরা আমাকে বুদ্ধিদৃপ্তভাবে যীশুর জীবনকে পরীক্ষা করার চ্যালেঞ্জ জানায়। আমি খুঁজে পেলাম যে বুদ্ধ, মোহাম্মদ এবং কনফুসিয়াস নিজেদেরকে কখনও ঈশ্বর দাবি করেন নি, কিন্তু যীশু করেছেন। আমার বন্ধুরা আমাকে যীশুর ঈশ্বরত্বের প্রমাণ দেখাতে লাগল। তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল যে যীশু মানুষরূপে ঈশ্বর ছিলেন যিনি মানুষের পাপের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছেন, এবং তিনি কবরস্থ হয়েছেন, তিন দিন পর পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং আজ তিনি একজনের জীবন পরিবর্তন করতে পারেন।
আমি ভেবেছিলাম এটা একটা হাস্যকর কোন ঘটনা। আসলে, আমি ভেবেছিলাম বেশিরভাগ খ্রীষ্টিয়ানারাই বোকার মত ভুল দিকে হাঁটছে। আমি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করব। আমি একজন খ্রীষ্টিয়ানের প্রতিউত্তরের জন্য ক্লাসে অপেক্ষা করছিলাম যাতে করে আমি সেই ব্যক্তিকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যুক্তি দিয়ে অপমানিত করতে এবং অধ্যাপককে ঘুষির মত করে যুক্তি দিয়ে আঘাত করতে পারি। আমি কল্পনা করতাম যদি কোন খ্রীষ্টিয়ানের মস্তিষ্কের কোন কোষ থাকে তাহলে এটি একাকীত্বের কারণে মারাই যাবে। এর চেয়ে ভাল কিছু আমার জানা ছিল না।
কিন্তু এই লোকেরা আমাকে বার বার চ্যালেঞ্জ করছিল। অবশেষে, আমি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি। আমি গর্বের সাথে তাদের এই বিষয়টি খন্ডন করার চেষ্টা করলাম এই ভেবে যে এই বিষয়ে কোন যুক্তিই নেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে এই বিষয়ে প্রমাণ দেওয়ার জন্য কেউই নেই।
অনেক মাস এই বিষয়ে অধ্যয়ন করার পর, অবশেষে আমার মনে এটা খুঁজে পেল যে যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে যা দাবি করছিলেন তিনি তাই ছিলেন। এটা আমাকে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমার মন আমাকে বলল যে এই সবকিছুই সত্য কিন্তু আমার স্বেচ্ছাচারিতা আমাকে অন্য দিকে পরিচালিত করছিল।
আমি আবিষ্কার করলাম যে খ্রীষ্টিয়ান হয়ে ওঠা হল নিজের অহংকারকে ফেলে দেয়া। যীশু খ্রীষ্ট তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার প্রতি আমার স্বেচ্ছাচারিতার ওপর সরাসরি চ্যলেঞ্জ জানান। আমি তাঁকে শব্দান্তরে প্রকাশ করি।‘‘দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ঘা দিচ্ছি। কেউ যদি আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব’’ (প্রকাশিক বাক্য ৩:২০)। খ্রীষ্ট জলের উপর দিয়ে হেঁটেছেন কিনা বা জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছেন কিনা সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করি না, আমি আমার আশেপোশে কোন পার্টি-জাতীয় কিছু চাই না।আমি এমন ভাল সময়কে নষ্ট করার উপায় সম্পর্কে ভাবতেই পারি নি। তাই আমার মন আমাকে বলছিল খ্রীষ্টিয়ানিটি সত্য এবং আমার স্বেচ্ছাচারিতা চেলে যাচ্ছিল।
যখনই আমি উদ্যমী খ্রীষ্টিয়ানদের আশেপাশে থাকতাম তখনই দ্বন্দ্বের শুরু হত। যখন আপনি দু:খী থাকেন তখন আপনি যদি কখনও কোন সুখী মানুষদের আশেপাশে থাকেন, তাহলে তারা আপনার কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তারা অনেক খুশি থাকবে এবং আমি এতটাই দু:খী হব যে আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে থেকে উঠে ছাত্র সংঘ থেকে বের হয়ে যাব। এটা এমন একটা পর্যায়ে যাবে যে তখন আমি রাত দশটার সময় বিছানায় শুয়ে থাকব এবং সকাল চারটার আগে আমার ঘুম আসবে না। আমি জানতাম যে আমার মন থেকে এই চিন্তাগুলো করার আগেই এগুলোকে বের করে দেওয়া উচিত! অবশেষে, আমার মাথা এবং হৃদয় ডিসেম্বর ১৯,১৯৫৯ সকাল ৮:৩০ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে সাড়াদান করে— সেই দিন আমি একজন খ্রীষ্টিয়ান হই।
সেই রাতে আমি যীশুর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চারটি বিষয়ের ওপর প্রার্থনা করি যেগুলো আমার জীবন পরিবর্তন করেছে। প্রথমে আমি বলেছি,‘‘প্রভু যীশু, আমার জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’’ দ্বিতীয়বার বলেছি,‘‘আমি আমার জীবনে তোমাকে অসন্তুষ্ট করে যা করেছি সেগুলো আমি স্বীকার করছি এবং তোমার কাছে ক্ষমা যাচ্ঞা করছি এবং আমাকে পরিষ্কৃত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তৃতীয় বিষয়টিতে বলেছি,‘‘এখন, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়ে আমি জানতে চাই কীভাবে আমি আমার অন্তরের দরজা খুলব এবং তোমাকে আমার রক্ষাকারী প্রভু হিসেবে বিশ্বাস করব। আমার জীবনকে তুমি নিয়ন্ত্রণ কর। আমাকে ভেতর থেকে পরিবর্তিত কর। তুমি আমাকে যেমন ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চেয়ে সৃষ্টি করেছিলে আমাকে তেমন মানুষ হিসেবে তৈরী কর।’’ এই বিশ্বাসের ভিত্তি না জেনে তৈরী হয় নি বরং এটা ইতিহাস এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রমাণের ভিত্তিতে তৈরী হয়েছে।
আমি নিশ্চিত যে আপনি বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের তাদের ব্যক্তিগত চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার কথা বলে থাকে। তো, আমি প্রার্থনা করার পর, কিছুই হল না। আমি বোঝাতে চাচ্ছি কিছুই ঘটল না। আর আমি তখনও ডানা ছড়াই নি। এমনকি, আমি যখন এই সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন আমার খারাপ লাগছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি বমি করতে চলেছি। উফ, না, আমি ভাবছিলাম, কি তোমাকে চুষে নিচ্ছে? আমি সত্যিকারভাবেই অনুভব করছিলাম যে আমি গভীরতম পর্যায় যাচ্ছি (আর আমি নিশ্চিত ছিলাম যে কয়েকজন হয়ত আমার এই অবস্থাটা বিষয়ে চিন্তাও করছিল!)
কিন্তু ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত, আমি এটা বুঝতে পারলাম যে আমি গভীরতম পর্যায়ে যেতে পারিনি। আমার জীবন পরিবর্তিত হয়েছিল। একবার আমি ইতিহাস অনুষদের একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে মিডওয়েস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, আর সেখানে আমি বলেছিলাম যে আমার জীবন পরিবর্তিত হয়েছে। সে আমাকে বাধা প্রদান করে বলল যে ‘‘ম্যাকডুয়েল, আপনি কি আমাদের এটা বলতে চাচ্ছেন যে বিংশ শতকে ঈশ্বর সত্যিকারভাবে আপনার জীবন পরিবর্তন করেছেন? কোন দিক দিয়ে?’’ ৪৫ মিনিট পর তিনি বললেন, ‘‘ঠিক আছে, এটা যথেষ্ট।’’ আমি আপনাকে কিছু বিষয় নিয়ে বলি, আমি সেই দিন তাকে এবং শ্রোতাদেরকেও এই বিষয়ে বললাম।
আমার যে বিষয়টি ঈশ্বর পরিবর্তন করেছেন তা হল আমার অস্থিরতা। আমি সবসময়ই দখল করতে চাইতাম। আমি বিদ্যায়তন জুড়ে হাঁটাহাটি করতাম এবং আমার মন চারপাশের দেয়ালগুলোর মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ঘূর্ণিঝড়ের মত করে বাধাপ্রাপ্ত হত। আমি বসে অধ্যয়ন করার চেষ্টা করতাম, কিন্তু আমি তা পারতাম না। কয়েক মাস পর আমি খ্রীষ্টের জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম, এতে করে মানসিক শান্তি বাড়ল। ভুল বুঝবেন না। আমি আমার দ্বন্দ্বের অনুপস্থিতির কথা বলছি না। যীশুর সাথে এই সম্পর্কের মাধ্যমে আমি যা পেয়েছি তা দ্বন্দ্বের অনুপস্থিতি নয় কিন্তু এটাবে মোকাবেলা করার শক্তি এসেছিল। আমি এই পৃথিবীর কোন কিছুর সাথেই এর বিনিময় করব না।
আরেকটি বিষয় যা আমার পরিবর্তিত হওয়া শুরু করেছিল তা হল বদমেজাজ। যদি কেউ আমার দিকে আড়চোখে তাকায় তার দিকে আমি আমার স্ট্যাক ছুঁড়ে মারতাম। কলেজে প্র্রথম বর্ষে থাকাকালীন সময়ে আমি একজন লোকে মেরে ফেলার কারণে সেই দাগ এখনও আমার শরীরে আছে। আমার বদমেজাজ আমার সাথে এতটাই লেগে ছিল যে আমি সচেতনভাবে কখনই একে পরিবর্তন করতে চাই নি। আমি দেখলাম যে আমি আমার বদমেজাজ হারাতে শুরু করছিলাম। এই ১৪ বছরে প্রথমবার আমি বিষ্ফোরিত হলাম (আর যখন আমি এটাকে আমার কাছ থেকে বের করলাম তখন আমার মনে হল আমি ছয় বছর ধরে এর জন্য প্রস্তুত হয়েছি।)
আমার পরিবর্তনের আরেকটি ক্ষেত্র হল যে আমি এখন অহংকার করি না। কিন্তু আমি এটা উল্লেখ করছি এই কারণে যে অনেক মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে এই একই পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে, আর আমি এই পরিবর্তনের উৎস খুঁজে পেয়েছি: যীশু খ্রীষ্টের সাথে সম্পর্ক তৈরীর কারণে। এই ক্ষেত্রটি হল ঘৃণা। আমার জীবনে অনেক ঘৃণা ছিল। এটা বাহ্যিকভাবে বিকশিত ছিল না, তবে এটা অভ্যন্তরীণ হয়রানির মত ছিল। আমি মানুষদের নিয়ে, জিনিস নিয়ে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরক্ত ছিলাম।
কিন্তু এই পৃথিবীতে আমি একজনকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতাম: আমার বাবাকে। আমি তার সাহসকে ঘৃণা করতাম। তিনি আমার কাছে শহুরে মদ্যপায়ী ছিলেন। সবাই জানত যে আমার বাবা মাতাল। শহরতলির আশেপাশে আমার বাবার মাতলামো নিয়ে আমার বন্ধুরা হাসি-ঠাট্টা করত। তারা এটা ভাবত না যে এই বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। আমি অন্য মানুষদের মত ছিলাম—যে বাইরে হাসাহাসি করত। কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, আমি ভেতরে ভেতরে কাঁদতাম। এমনও সময় গিয়েছে যে আমি গোয়াল ঘড়ের বাইরে বের হয়ে দেখি যে আমার মাকে এমনভাবে মারা হয়েছে যে তিনি উঠতে পারছেন না, তিনি গরুদের পেছনে শুয়ে আছেন। যখন আমার বন্ধুরা আসত, তখন আমি বাবাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে শস্যাগারে বেঁধে রাখতাম, এবং গাড়িটি সিলোর পাশে পার্ক করতাম। আমরা আমাদের বন্ধুদের বলতাম বাবা অন্য কোথাও গেছেন। আমার মনে হয় না আমি আমার বাবাকে যেমন ঘৃণা করতাম সেই পরিমাণ ঘৃণা কেউ কাউকে করে।
খ্রীষ্টের জন্য সিদ্ধান্ত নেবার পর, তিনি আমার জীবনে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর ভালবাসা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তিনি এই ঘৃণা তুলে নেন এবং একে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দেন। আমি আমার বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি,‘‘বাবা, আমি তোমাকে ভালবাসি।’’ আর আমি এটা সত্যিই বলছি। আমি আগে যেসব কাজ করেছি সেটার কথা মনে করে, তিনি বিস্মিত হলেন।
যখন আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হলাম তখন আমি মারাত্নক এই দুর্ঘটনার শিকার হই। আমার ঘাড়ে চোটের কারণে আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় আমার বাবা যখন আমার ঘরে আসলেন সেই ঘটনাটি আমি কখনও ভুলতে পারব না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ছেলে আমার, কীভাবে তুমি আমার মত একজন বাবাকে ভালবাসতে পারলে?’’ আমি উত্তর দিলাম,‘‘বাবা, ছয় মাস আগে আমি তোমাকে তুচ্ছ করেছি।’’ তারপর আমি আমার বাবাকে যীশুর বিষয়ে বলতে শুরু করলাম:‘বাবা, যীশুকে আমার জীবনে আসতে দাও। আমি সম্পূর্ণভাবে এর ব্যাখ্যা দিতে পারব না, কিন্তু এই সম্পর্কের ফলস্বরূপ আমি কেবল তোমাকেই নয় বরং অন্য মানুষকে ঠিক সেভাবেই ভালবাসতে এবং গ্রহণ করার ক্ষমতা খুঁজে পেয়েছি।
পয়তাল্লিশ মিনিট পর আমার জীবনের অন্যতম একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে। আমার নিজের পরিবারের থেকে একজন যিনি আমাকে খুব ভালভাবে জানেন তার চোখের দিকে আমি আমার চোখের পাপড়িও নামাতে পারছিলাম না, তিনি আমাকে বললেন,‘‘ছেলে আমার, ঈশ্বর তোমার জীবনে যা করেছেন সেটা যদি তিনি আমার জীবনে করতে পারেন তাহলে আমি তাঁকে আমার জীবনে আসার জন্য সুযোগ দিতে চাই।’’ সেখানেই আমার বাবা আমার সাথে প্রার্থনা করলেন এবং যীশু খ্রীষ্টের ওপর তার পাপের ক্ষমা পাবার জন্য বিশ্বাস স্থাপন করলেন।
স্বাভাবিকভাবে এই পরিবর্তনের জন্য কয়েক দিন, সপ্তাহ, অথবা এক বছরও লেগে যায়। আমার বাবার পরিবর্তনগুলো আমার চোখের সামনেই ঘটেছে। এটা এমন একটা বিষয়ের মত হয়েছিল যে, কেউ একজন ভেতরে গেলেন এবং আলোর বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। আমি এ পর্যন্ত কখনই কারও মধ্যে এত দ্রুত কোন পরিবর্তন দেখি নি। এর পরে আমার বাবা শুধুমাত্র্র একবারই হুইস্কির বোতল ধরেছিলেন। তিনি তার ঠোঁটের সমান দূরত্বে তা রেখেছিলেন আর এটাই শেষ ছিল। আমি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। যীশু খ্রীষ্টের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে জীবন পরিবর্তিত হয়।
আপনি খ্রীষ্টিয়ানিটি দেখে হাসতে পারেন। আপনি একে নিয়ে ঠাট্টা এবং বিদ্রুপ করতে পারেন। কিন্তু এটা কার্যকরী। এটা জীবন পরিবর্তন করে। যদি আপনি খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেন তখন আপনি আপনার আচরণ এবং কার্যকলাপগুলো দেখতে পারবেন কারণ যীশু খ্রীষ্টই জীবন পরিবর্তনের মূল।
কিন্তু খ্রীষ্টিয়ানিটি এমন কিছু নয় যেটা আপনি কারও গলায় জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেবেন। আমি যা করতে পারি সেটা হল আমি যা শিখেছি তা আপনাকে বলতে পারি। বাকীটা, আপনার সিদ্ধান্ত।
হয়ত আমি যে প্রার্থনাটি করেছি সেটা আপনাকে সাহায্য করতে পারে:‘‘প্রভু যীশু, তোমাকে আমার প্রয়োজন। আমার জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমাকে ক্ষমা কর এবং পরিষ্কৃত কর। এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে আমার ত্রাণকর্তা এবং প্রভু হিসেবে বিশ্বাস করি। তুমি আমাকে যেমন মানুষ হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছিলে আমাকে সেরকমভাবেই তৈরী কর। যীশুর নামে চাই। আমেন।’’
জস ম্যাকডুয়েল একজন আন্তর্জাতিক বক্তা, লেখক, এবং ক্যাম্পাস ক্রুয়েড ফর খ্রাইস্ট এর একজন ভ্রমণ প্রতিনিধি। তিনি মোর দেন এ কারপেন্টার এবং এভিডেন্স দ্যাট ডিমান্ডস এ ভারডিক্ট এর মত ক্ল্যাসিকসহ পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন।