পল ই, লিটিল এর লেখা
ঈশ্বর যে সত্যিই আছেন এবং তিনি দেখতে কেমন এবং তিনি যদি নিজেকে প্রকাশ না করেন এটা আমাদের পক্ষে জানা সত্যিই অসম্ভব।
ঈশ্বরের প্রকাশের কোন সূত্র খুঁজে পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই গোটা ইতিহাসকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। এখানে একটি স্পষ্ট সূত্র আছে। ২০০০ বছর আগে প্যালেস্টাইনের একটি অজনপ্রিয় গ্রামে একটা গোয়াল ঘরে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল। আজ সারা বিশ্বে এখনও যীশুর জন্মদিনটিকে ভাল উদ্দেশ্যেই উৎযাপন করা হচ্ছে। তাঁর জীবন গোটা ইতিহাসকেই পরিবর্তিত করেছে।
আমরা জানি যে,‘‘সাধারণ মানুষ তাঁর কথা সানন্দে শুনত।’’ আর,‘‘ কারণ তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না, বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন।’’১
তবে শীঘ্রই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, তিনি নিজের সম্পর্কে হতবাক এবং বিষ্ময়কর তথ্য দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে একজন অসাধারণ শিক্ষক বা ভাববাদীর চেয়েও বেশি কিছু দাবি করা শুরু করেছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবেই তাঁর ঈশ্বরত্ত্বের বিষয়টি বলা শুরু করেছিলেন। তিনি তাঁর পরিচয়কে তাঁর শিক্ষার মূলবিন্দুতে পরিণত করেছিলেন।
যারা তাঁকে অনুসরণ করত তাদেরকে তিনি সে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করেছিলেন তা হল,‘‘ কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?’’
যখন পিতর উত্তর দিলেন এবং বললেন,‘‘আপনি সেই মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।’’২ যীশু বিষ্মিত হন নি, আর তিনি পিতরকে বকাও দেন নি। এর বিপরীতে, তিনি তার প্রশংসা করলেন!
যীশু বার বার ‘‘আমার পিতা,’’ শব্দটি বলেছেন এবং তাঁর শ্রোতারা তাঁর কথার সম্পূর্ণ প্রভাবটি বুঝতে পারত। আমরা জানি যে,‘‘ যীশুর এই কথার জন্য যিহূদী নেতারা তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন, কারণ তিনি যে কেবল বিশ্রামবারের নিয়ম ভাংছিলেন তা নয়, ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে ডেকে নিজেকে ঈশ্বরের সমানও করছিলেন।’’৩ অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আর পিতা এক।” তখন যিহূদী নেতারা তাঁকে মারবার জন্য আবার পাথর কুড়িয়ে নিলেন। যীশু তাদের বললেন তাঁর কোন অলৌকিক কাজটির জন্য তারা তাঁকে মারতে চায়। নেতারা উত্তরে বললেন, “ভাল কাজের জন্য আমরা তোমাকে পাথর মারি না, কিন্তু তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলছ বলেই মারি। মানুষ হয়েও তুমি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করছ।”৪
যীশুর যে ঈশ্বরের মত একই ক্ষমতা রয়েছে তা তিনি স্পষ্টভাবেই দাবি করেছেন। একবার যীশু একজন অবশ রোগীকে বলেছিলেন,‘‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।’’ তখন সেই ধর্মীয় নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল। ‘‘লোকটা এই রকম কথা বলছে কেন? সে তো ঈশ্বরকে অপমান করছে। একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে?” ইজন্য তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা কেন মনে মনে ঐ সব কথা ভাবছেন?এই অবশ-রোগীকে কোন্টা বলা সহজ-‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না, ‘ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও’?
যীশু তাঁর কথা চলামান রেখে বললেন,‘‘ কিন্তু আপনারা যেন জানতে পারেন পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন“আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে বাড়ী চলে যাও।” তখনই সেই লোকটি উঠে তার মাদুর তুলে নিল এবং সকলের সামনেই বাইরে চলে গেল।
যীশু এমন কিছু বিবৃতিও করেছেন যে,‘‘ চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়।’’৬ আর তিনি অনেকবার বলেছেন যে, যে কেউ তার উপর বিশ্বাস করে তিনি তাকে অনন্ত জীবন দেন। ‘‘তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে।’’৭ ‘‘তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে।’’৭ ‘‘তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে।’’৮
যীশু নিজের সম্পর্কে যে দাবিগুলো করছিলেন সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মহাপুরোহিতরা যখন যীশুকে সরাসরি এই ধরণের জটিল প্রশ্ন করেছেন যে, ‘‘তুমি কি পরমধন্য ঈশ্বরের পুত্র মশীহ?’’
যীশু বললেন, “আমিই সেই।’’ আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্রকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আকাশে মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”
এতে মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার? আপনারা তো শুনলেনই যে, ও ঈশ্বরকে অপমান করল। আপনারা কি মনে করেন?”৯
যীশুর সাথে ঈশ্বরের সংযোগ এতটাই নিকটবর্তী ছিল যে নিজের ব্যক্তিত্বের মনোভাবের সাথে ঈশ্বরের মনোভাবের তুলনা করেছিলেন। তাই তাঁকে জানা মানেই ঈশ্বরকে জানা।১০ তাঁকে দেখা মানেই ঈশ্বরকে দেখা।১১ তাঁকে বিশ্বাস করা মানে ঈশ্বরকেই বিশ্বাস করা।১২ তাঁকে গ্রহণ করা মানে ঈশ্বরকেই গ্রহণ করা।১৩ তাঁকে ঘৃণা করা মানে ঈশ্বরকে ঘৃণা করা।১৪ আর তাঁকে সম্মান করা মানে ঈশ্বরকেই সম্মান করা।১৫
এখানে প্রশ্ন হল, যীশু কি সত্য বলছিলেন?
যীশু যখন নিজেকে ঈশ্বর বলছিলেন তখন হয়ত তিনি মিথ্যা বলেছেন। সম্ভবত, তিনি জানতেন যে তিনি ঈশ্বর ছিলেন না, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে তাঁর কর্তৃত্ব স্থাপন করার জন্য তাদের সাথে এই প্রতারণা করলেন। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি সমস্যা আছে। যারা তাঁর ঈশ্বরত্বকে অস্বীকার করছে তারাও বলবে যে তারা মনে করে যীশু একজন মহান ধার্মিক শিক্ষক ছিলেন। তারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হয় যে যীশুর শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল- তাঁর পরিচয়- তিনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলে থাকেন তাহলে তাঁর মহান একজন ধার্মিক শিক্ষক হওয়াটা প্রায় অযৌক্তিক।
অরেকটি সম্ভাবনা হতে পারে যে যীশু আন্তরিক ছিলেন কিন্তু তিনি স্ব-প্রতারিত ছিলেন। আমাদের কাছে এমন একজন ব্যক্তির নাম আছে যিনি নিজেকে ঈশ্বর মনে করেন। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। কিন্তু খ্রীষ্টের জীবনে আমরা দেখতে পাই যে, তাঁর মধ্যে কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা এবং ভারসাম্যহীনতা দেখি নি যেটার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে তিনি মাসসিকভাবে অসুস্থ কোন ব্যক্তি ছিলেন।
তৃতীয় সম্ভাবনা হতে পারে যে, তৃতীয় এবং চতুর্থ শতাব্দীতে হিস্টেনসিস্টিক অনুসারীরা তাঁর মুখে এমন কিছু শব্দ দিয়েছিল যে তিনি এগুলো শুনে হতভম্ভ হয়ে যেতে পারতেন। তিনি যদি ফিরে আসতেন তবে তাদেরকে তখনই প্রত্যাখ্যান করতেন।
যাই হোক, এগুলো ধরে থাকে না। আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা খুঁজে বের করেছে যে খ্রীষ্টের জীবনী সম্পর্কে যে চারটি লেখা হয়েছে সেগুলো যারা যীশুকে দেখেছিল, শুনেছিল এবং অনুসরণ করেছিল তারাই লিখেছিল। এই সুসমাচারগুলোর বিবরণগুলোতে যারা যীশুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তাদের দ্বারা নিশ্চিত হওয়া নির্দিষ্ট তথ্য এবং বর্ণনাগুলোই লেখা হয়েছে।
মৃত উলিয়াম এফ. অলব্রাইট, যিনি জনস হোপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশ্ববিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, ৭০ খ্রীষ্টাব্দের পর যেসব সুসমাচারগুলো লেখা হয়েছে সেগুলোকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। এজন্য প্রাথমিক সুসমাচারগুলোর মধ্যে মথি, মার্ক, লূক এবং যোহনের লেখা সুসমাচারগুলোর জন্যই তারা এতটা প্রচলিত এবং প্রভাব বিস্তার করেছিল।
যীশু কখনই একজন মিথ্যাবাদী ছিলেন না, বা মানসিকভাব ভারসাম্যহীন ছিলেন না, অথবা ঐতিহাসিক বাস্তবতাহীন কেউ ছিলেন না। একমাত্র বিকল্প হচ্ছে যে যখন যীশু নিজেকে ঈশ্বর বলেছিলেন তখন তিনি সেটা সজ্ঞানে সত্যটাই বলেছিলেন।
যে কেউই যেকোন কিছু দাবি করতে পারে। অন্য অনেকেই আছেন যারা নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন। আমি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করতে পারি, আর আপনিও নিজেকে ঈশ্বর দাবি করতে পারেন, কিন্তু এখানে আমাদের সকলকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যে,‘‘ আমাদের দাবি প্রমাণ করার জন্য কি কোন প্রমাণপত্রাদি আছে?’’ আমার ক্ষেত্রে এই দাবিটি ফিরিয়ে নিতে আমার পাঁচ মিনিও সময় লাগবে না। আপনার হয়ত এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বেশি সময় লাগবে না।
কিন্তু এটা যখন নাসারতের যীশুর ক্ষেত্রে হয়, তখন এটা ততটা সহজ নয়। তিনি যা দাবি করেছিলেন সেগুলোর প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। তিনি বলেছেন, ‘‘ আমাকে বিশ্বাস না করলেও আমার কাজগুলো অন্ততঃ বিশ্বাস করুন। তাতে আপনারা জানতে ও বুঝতে পারবেন যে, পিতা আমার মধ্যে আছেন আর আমি পিতার মধ্যে আছি।”১৬
তাঁর নৈতিক চরিত্রটি তাঁর দাবির সাথে মিলিত হয়েছে। তাঁর জীবনের মান এতটাই বেশি ছিল যে তিনি তাঁর শত্রুদের এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, ‘‘ আপনাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলে প্রমাণ করতে পারেন?’’১৭ তিনি নিরবতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, এমনকি যদিও তিনি অন্যদেরকে তাঁর চরিত্রে কোন খুঁত ধরার জন্য স্বেচ্ছায় সুযোগ দেবেন।
৩আমরা জানি যে যীশু শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছিলেন, কিন্তু আমরা কখনই তাঁর এই অংশে পাপের স্বীকারোক্তির বিষয়টি দেখি নি। তিনি কখনই ক্ষমা চান নি, বরং তিনি তাঁর অনুসারীদের ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
যীশুর বিষয়ে এই অংশে কোন প্রকার নৈতিকতার ব্যর্থতার ঘাটতি এই সত্যের বিবেচনায় অবাক করে দেয় যে এটি যুগে যুগে সাধু এবং রহস্যবাদীদের অভিজ্ঞাতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পুরুষ এবং মহিলা যত বেশি ঈশ্বরের কাছে আসে, ততবেশি তারা তাদের নিজস্ব ব্যর্থতা, দুর্নীতি, এবং ভুলত্রুটি সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পারবে। কেউ চকচকে আলোর যত কাছে থাকবে সে ততবেশি স্নানের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে।
যোহন, পৌল, এবং পিতরের বিষয়টি আরও সাংঘাতিক, যারা প্রত্যেকেই ছোটবেলা থেকেই পাপের বিশ্বজনীনতা সম্পর্কে বিশ্বাস করার জন্য প্রশিক্ষিত হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নিষ্পাপ খ্রীষ্টের সম্বন্ধে বলেছেন,‘‘ যিনি কোন পাপ করেন নি কিম্বা যাঁর মুখে কোন ছলনার কথা ছিল না।’’১৮
এমনকি পিলাত, যিনি যীশুকে মৃত্যুর আদেশ দিয়েছিলেন, তিনিও প্রশ্ন করেছিলেন যে,‘‘ কেন, সে কি দোষ করেছে?’’ জনতার দাবি শোনার পর, পিলাত বলেছেন যে,‘‘ এই লোকের রক্তের জন্য আমি দায়ী নই;’’। সেই জনতা অনবরতভাবে যীশুকে (তার ঈশ্বরনিন্দা, নিজেকে ঈশ্বর দাবি করা) এসকল কারণে ক্রুশে দেওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকল। যে রোমীয় সেনাপতি যীশুর ক্রুশারোপনের সময় সাহায্য করেছিল সেও বলেছিল,‘‘ সত্যিই উনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।’’১৯
যীশু অনবরতভাবে তাঁর ক্ষমতা এবং দয়া উভয়ই দেখিয়েছেন। তিনি খোঁড়াকে হাঁটার সুযোগ করে দিয়েছেন, অন্ধকে দেখার সুযোগ দিয়েছেন, এবং রোগাক্রান্তদেরকে সুস্থ করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, জন্মথেকে অন্ধ একজন ব্যক্তি মন্দিরের বাইরে সকলের পরিচিত একজন ভিক্ষুক ছিল। যখন যীশু তাঁকে সুস্থ করলেন, তখন ধর্মীয় ব্যবস্থাবেত্তারা যীশুর সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। সেই ব্যক্তি উত্তরে বলল,‘‘আমি কেবল একটি বিষয়ই জানি। আমি আগে অন্ধ ছিলাম কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি!’’ সে বুঝতে পারে নি যে এই ধর্মীয় ব্যবস্থাবেত্তারা এই সুস্থকর্তাকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে চেনে নি। সে বলল,‘‘জগৎ সৃষ্টির পর থেকে কখনও শোনা যায় নি, জন্ম থেকে অন্ধ এমন কোন লোকের চোখ কেউ খুলে দিয়েছে।’’২০ তার কাছে সেই প্রমাণ সুস্পষ্ট ছিল।
যীশু স্বয়ং প্রকৃতির উপরেই তাঁর অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি গালীল সাগরের বিধ্বংসী বাতাসময় এবং ঢেউময় ঝড়কে আদেশ দিয়েছেন। যারা নৌকায় ছিল তারা এটা দেখে বিষ্মিত হয়ে এটা বলাবলি করছিল,‘‘ ইনি কে যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে?”২১
তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। তিনি ৫০০০ লোকের এক বিশাল জনতাকে পাঁচটি রুটি এবং দু’টি মাছ দিয়ে খাইয়েছিলেন। একজন শোকগ্রস্ত বিধবার একমাত্র ছেলেকে মৃত থেকে জীবত করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
লাসার নামে যীশুর একজন বন্ধু মারা গিয়েছিলেন এবং তাকে কবরস্থ করার চারদিন ইতোমধ্যে কেটে গেছে। তবুও যীশু বললেন,‘‘ লাসার, বের হয়ে এস।’’ আর সে নাটকীয়ভাবে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠল, আর অনেকেই এটা দেখল। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল তাঁর শত্রুরাও তাঁর এই অলৌকিক কাজগুলোকে অস্বীকার করে নি। উপরন্তু, তারা যীশুকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। তারা বলল ‘‘এই লোকটা তো অনেক আশ্চর্য কাজ করছে।আমরা যদি তাকে এইভাবে চলতে দিই তবে সবাই তার উপরে বিশ্বাস করবে।’’২২
যীশুর অনন্য ঈশ্বরত্ত্বের প্রমাণ হল তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন। যীশুর বেঁচে থাকাকালীন সময়ে, তিনি মারা যাবেন, এবং কোন নির্দিষ্ট উপায়ে তিনি মারা যাবেন, এবং কবরস্থ হওয়ার তিন দিন পরেই তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবেন এই বিষয়গুলো তিনি স্পষ্টভাবেই পূর্বাভাস দিয়েছেন।
অবশ্যই এটা চরম একটি পরীক্ষা ছিল। এটা এমন একটা দাবি ছিল যেটা প্রমাণ করা সহজ ছিল। হয় এই ঘটনাটি ঘটবে নতুবা ঘটবে না। হয় এটা তাঁর পরিচয়ের বিষয়ে সাক্ষ্য বহন করবে নতুবা তাঁর পরিচয়কে ধ্বংস করবে। আর আপনার এবং আমার জন্য গুরু্ত্বপূর্ণ বিষয় হল, যীশুর মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়া তাঁর দাবির প্রমাণস্বরূপ হবে নতুবা এগুলো নিচের লেখা হাস্যকর কোন বিবৃতির মত হবে:
‘‘আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।’’২৩ ‘‘আমিই জগতের আলো। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের আলো পাবে।’’২৪ যারা তাঁকে বিশ্বাস করে, ‘‘ আমি তাদের অনন্ত জীবন দেই।…’’২৫
তাই তাঁর নিজের কথাতেই, তিনি সত্যতা প্রমাণ করছেন,‘‘ মনুষ্যপুত্রকে লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে, তারা তাঁকে মেরে ফেলবে, কিন্তু তিন দিনের দিন আবার তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।’’২৬
যদি খ্রীষ্ট জেগে উঠতেন, তাহলে তিনি আমাদেরকে যা দিতে চান, সেগুলো তিনি পূর্ণ করতে পারতেন। এর মানে হল তিনি সত্যিই পাপের ক্ষমা করতে পারেন, আমাদেরকে অনন্ত জীবন দিতে পারেন, এবং আমারদের বর্তমানের জীবনকে পরিচালনা দান করতে সাহায্য করতে পারেন। ঈশ্বরের ক্ষেত্রে, আমরা এখন জানি যে ঈশ্বর কেমন এবং আমরা তাঁর আহব্বানে সাড়া দিয়ে তাঁকে এবং আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসাকে ব্যক্তিগতভাবে জানতে পারি।
অন্যদিকে, যদি খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে জীবিত না হতেন, তাহলে খ্রীষ্টিয়ানিটি কোন ভিত্তি বা কোন সত্যতা থাকত না। এগুলো সবকিছুই মিথ্যা। যীশু শুধুমাত্র একজন মৃত ব্যক্তি ছিলেন না। যদি তাই হত, তাহলে যেসকল শহীদেরা গাইতে গাইতে সিংহের ফাঁদে পড়েছিল, এবং সমসাময়িক মিশনারিরা যারা অন্যের কাছে এই সুখবর নিয়ে যাওয়াতে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে, তাদের আত্নত্যাগ বোকার মত কাজ করা হত।
যীশুর পুনরুত্থানের প্রমাণগুলোর দিকে দেখা যাক।
যীশু যেসকল আশ্চর্য কাজ করেছেন, সেগুলো থেকে বোঝা যায় যে তিনি খুব সহজেই ক্রুশের যাতনা থেকে নিজেকে অনেক আগেই মুক্ত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
যীশুকে আটক করার আগে, তিনি বলেছিলেন,‘‘ কেউই আমার প্রাণ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে না, কিন্তু আমি নিজেই তা দেব।’’২৭
তাঁকে আটক করার আগে, যীশুর বন্ধু পিতর তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যীশু পিতরকে বললেন,‘‘ তোমার ছোরা খাপে রাখ।... তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতাকে ডাকলে তিনি এখনই আমাকে হাজার হাজার স্বর্গদূত পাঠিয়ে দেবেন না? কিন্তু তাহলে পবিত্র শাস্ত্রের কথা কিভাবে পূর্ণ হবে?’’২৮ স্বর্গ এবং পৃথিবীর ওপর তাঁর এতটাই ক্ষমতা ছিল। যীশু স্বেচ্ছায় তাঁর মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন।
যীশুর মৃত্যু ছিল জনসম্মুখে ক্রুশীয় মৃত্যু, যেটি ছিল বহু শতাব্দী ধরে চলে আসার রোমীয় সরকারের শাস্তির জন্য ব্যবহৃত নির্যাতন এবং মৃত্যুদন্ড দেয়ার একটি স্বাভবিক রূপ। যীশুকে ঈশ্বরনিন্দা (নিজেকে ঈশ্বর দাবি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যীশু বলেছেন এটা ছিল আমাদের পাপের জন্য বেতন।
যীশুকে ধারালো ধাতব বা হাড়ের টুকরাসমৃদ্ধ কয়েকটি দড়ি বিশিষ্ট চাবুক দ্বারা আঘাত করা হয়েছিল। বড় কাঁটাসমৃদ্ধ লতার দ্বারা তৈরীকৃত মুকুট তাঁর মাথায় পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা তাঁকে জেরুশালেমের বাইরের একটি পাহাড়ে জোরপূর্বক হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারা তাঁকে কাঠের ক্রুশে ফেলে, তাঁর হাতের কব্জি এবং পা দুটোকে একত্রিত করে সেই ক্রুশের সাথে পেরেক মেরেছিল। তিনি সেখানে ঝুলে ছিলেন, এবং একপর্যায়ে তিনি মারা গেলেন। তিনি মারা গিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি বর্শা দিয়ে তাঁর পাঁজরে আঘাত করা হয়েছিল।
ক্রুশ থেকে যীশুর দেহকে নামিয়ে সুগন্ধি এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মমির মত তাঁর দেহটিকে আবৃত করা হয়েছিল। তাঁর দেহকে শক্ত পাথরের একটি কবরে রাখা হয়েছিল, যেখানে প্রবেশদ্বারের নিরাপত্তার জন্য বড় একটি পাথর দিয়ে কবরের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল।
সবাই জানত যে যীশু বলেছিলেন তিনি তিন দিন পর মৃত্যু থেকে জীবিত হবেন। তাই তারা প্রশিক্ষিত রোমীয় সৈন্য দ্বারা কবরটিকে পাহাড়া দিয়ে রাখল। তারা রোম সরকারের সিলমোহর দিয়ে কবরের বাইরে ঝুলিয়ে রাখল যাতে লেখা ছিল সেই কবরটি রোম সরকারের সম্পদ।
এতকিছু হওয়া সত্ত্বেও, তিন দিন পর বড় পাথরের সীলমোহরটি কবরের পাশে একটি গর্তের দিকে পাওয়া গিয়েছিল। দেহটি সেখানে ছিল না। শুধুমাত্র দেহটিকে আবরণকৃত কাপড়গুলো কবরে পাওয়া গেল, দেহটি সেখানে ছিল না।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে যীশুর সমালোচনাকারী এবং অনুসারী উভয়েইে এটা স্বীকার করে যে যীশুর কবর খালি ছিল এবং তাঁর দেহটি সেখানে ছিল না।
শুরুর দিকের ব্যাখ্যাগুলো এভাবে প্রচলিত ছিল যে, যখন রোমীয় সৈন্যরা ঘুমাচ্ছিলেন তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর দেহটিকে চুরি করেছিল। এটা কিছুটা ভাবার বিষয়। সেই সৈন্যরা ছিল রোমান সরকারের সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত সৈন্যের সম্পূর্ণ দল এবং তারা যদি সেখানে কর্তব্যরত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে সেটা তাদের জন্য মৃত্যুদন্ডের মত শাস্তিস্বরূপ হত।
পরবর্তীতে, যীশু প্রত্যেকজন শিষ্যই তিনি যে জীবিত আছেন, মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন সেটা ঘোষণা করার জন্য (আলাদাভাবে এবং ভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে থেকে) নির্যাতিত এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন। পুরুষ এবং মহিলা যেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে সেটার জন্য তারা মরবে, যদিও তারা যা জানে সেটা আসলে মিথ্যাও হতে পারে। তুবও তারা জানে না যে তারা যা জানে সেট আসলে মিথ্যা। যদি কোন ব্যক্তি সত্য কথা বলে, তাহলে সে তার নিজের মৃত্যু ডেকে আনবে।
তাহলে কি হয়ত ব্যবস্থাবেত্তারাই দেহটিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন? এখানে একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। তারা যীশুকে এজন্যই ক্রুশারোপিত করেছে যাতে লোকেরা তাঁকে আর বিশ্বাস না করে। যদি তারা খ্রীষ্টের দেহটিকে পেত, তাহলে তারা সেটাকে জেরুশালেমের রাস্তায় প্রদক্ষিণ করতে পারত। তারা এক ঝাপটায় খ্রীষ্টিয়ানিটিকে সফলভাবেই দমনপীড়নের মাধ্যমে দমিয়ে রাখত। তারা এটা করেনি বলে তাদের কাছে মৃতদেহটি ছিল না বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
আরেকটি তত্ত্ব হল যে মহিলারা (যারা যীশুর খালি কবর প্রথমে দেখেছিল) তারা হাতাশাগ্রস্থ ছিল এবং তাদের দু:খ কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিল, তারা সকালের আবছা আলোয় তারা তাদের পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং ভুল কবরে গিয়েছিলেন। তাদের হতাশার কারণে তারা খ্রীষ্টকে পুনরুত্থিত অবস্থায় দেখার কল্পনা করেছিলেন কারণ কবরটি খালি ছিল। কিন্তু আবারও, যদি সেই মহিলা ভুল কবরে গিয়ে থাকেন, তাহলে কেন মহাপুরোহিত এবং অন্যান্য শত্রুরা তাদের বিশ্বাসের মাধ্যমে সঠিক কবরে গেলেন না এবং দেহটিকে উৎপন্ন করলেন না?
আরও একটি সম্ভাবনাকে অনেকে এটা বলে থাকেন যে ‘‘অচৈতন্য তত্ত্ব’’। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, খ্রীষ্ট আসলে মারা যান নি। তাঁকে ভুলবশত মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু বেহুঁশ অবস্থায় তিনি নির্যাতন, ব্যাথা, এবং রক্তক্ষরণ, এবং কবরের শীতলতায় তিনি পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।(কেউ এখানে এই বিষয়টি বাদ তিয়ে যাচ্ছে যে তারা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর পাঁজরে আঘাত করেছিল।)
কিন্তু আমরা কিছু সময়ের জন্য ধরে নিচ্ছি যে খ্রীষ্টকে জীবন্তভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং বেহুঁশ করা হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা কি সম্ভব যে তিনি সেখানে কোন প্রকার খাবার, জল, বা কোন সেবা ছাড়াই তিন দিন বেঁচে ছিলেন? তাঁর কি নিজের থেকে সেই মৃতের কাপড় খোলা, কবরের মুখ থেকে ভারী পাথর সরানো, রোমীয় সৈন্যদের মোকবিলা, এবং ক্ষত-বিক্ষত পা নিয়ে অনেক মাইল হেঁটে যাওয়ার শক্তি ছিল? এটাও আসলে ভাববার বিষয়।
যাইহোক, যীশুর অনুসারীরা তাঁর ঈশ্বরত্ত্বে বিশ্বাসের জন্য শুধু মাত্র খালি কবরের বিষয়টিতেই নিশ্চিত প্রত্যয় জন্মায় নি।
শুধুমাত্র এই বিষয়টিই তাদেরকে এটি বিশ্বাস করায় নি যে যীশু সত্যিই মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন, তিনি বেঁচে ছিলেন এবং তিনিই যে ঈশ্বর। তাদেরকে যে কারণটি বিশ্বাস করতে সাহায্য করেছে তা হল যীশু তাদের সাথে অনেকবার নিজে, স্ব-শরীরে, ভোজে অংশগ্রহণ করে, তাদের সাথে কথা বলেছেন। বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন লোকের সাথে তিনি এমন করেছেন। সুসমাচার লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন লেখক, লূক যীশুর সম্বন্ধে বলেছেন,‘‘ তাঁর দুঃখভোগের পরে এই লোকদের কাছে তিনি দেখা দিয়েছিলেন এবং তিনি যে জীবিত আছেন তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়েছিলেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি শিষ্যদের দেখা দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় বলেছিলেন।’’২৯
এগুলো লিখতে অমূলপ্রত্যক্ষ মানায় না। একটি কারণ হল জায়গা, সময়, মানুষের ভিন্নতা। কিন্তু আরও, অমূলপ্রত্যক্ষ হবার জন্য, একজনকে এতটাই তীব্র বিশ্বাস রাখতে হবে যে একজন ব্যক্তি এমন কিছুর কল্পনা করে যেটা আসলে সেখানে নেই।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ছেলেহারা মা যার মনে পড়ে তার ছেলে প্রতিদিন স্কুল থেকে ৩:৩০ এ ঘরে আসত। প্রত্যেকদিন বিকালে সেই মা তাঁর ছেলেকে দেখতে না পাচ্ছে এবং তার সাথে কথা বলতে না পারা পর্যন্ত দরজায় অপেক্ষা করতে থাকে। তিনি বাস্তবতার সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছেন।
কেউ হয়ত মনে করতে পারে যে যীশুর পুনরুত্থানের সময় তাঁর শিষ্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তবে এখানে এর বিপরীত ঘটনা ঘটেছিল। তারা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজী হয়েছিল যে যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন।
চারজন সুসমাচার লেখকের প্রত্যেকেই এই সাক্ষ্য দিয়েছন যে যীশু আবারও শারীরিকভাবে জীবিত হয়েছিলেন। একবার যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের সাথে একত্রিত হয়েছিলেন, থোমা সেখানে ছিল না। যখন তারা থোমাকে এই বিষয়ে বলল, সে সাধারণভাবেই সেটা বিশ্বাস করল না। সে তাদের সোজাসুজিভাবে বলল ‘‘আমি তাঁর দুই হাতে যদি পেরেকের চিহ্ন না দেখি, সেই চিহ্নের মধ্যে আংগুল না দিই এবং তাঁর পাঁজরে হাত না দিই, তবে কোনমতেই আমি বিশ্বাস করব না।”
এক সপ্তাহ পর, যীশু তাদের সাথে আবারও দেখা করতে এলেন আর তখন থোমা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যীশু থোমাকে বললেন,‘‘ “তোমার আংগুল এখানে দিয়ে আমার হাত দু’খানা দেখ এবং তোমার হাত বাড়িয়ে আমার পাঁজরে রাখ। অবিশ্বাস কোরো না বরং বিশ্বাস কর।’’ তখন থোমা বললেন, “প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার।”30
খ্রীষ্ট জীবনের উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা দান করেন। ‘‘আমিই জগতের আলো। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের আলো পাবে।’’৩১
সাধারণভাবে অনেকেই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য এবং তাদের নির্দিষ্ট জীবন নিয়ে অন্ধকারে আছে। তারা জীবনের সুইচের সন্ধানে জীবনের ঘরের চারপাশে ঘুরছে। যে কখনই কোন অন্ধকারে পড়েনি, কোন অপরিচিত কক্ষে এই অনিরাপত্তার অনুভূতি হয়। যখন আলো জ্বলে, তখন সুরক্ষার অনুভূতি হয়। আর তাই অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এগিয়ে যাবার পথ হল খ্রীষ্ট।
মৃত কার্ল গুন্তাভ জাং বলেছেন,‘‘ আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে রয়েছে শূন্যতা।’’ আমরা ভাবি যে অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক, অর্থ, সফলতা, জনপ্রিয়তা আমরা যে সুখ খুঁজি সেটা নিয়ে আসবে। কিন্তু এখানে সবসময়ই পেছনে একটি শূন্যস্থান থাকে। তারা সম্পূর্ণভাবে পরিতৃপ্তি দেয় না। আমরা ঈশ্বরের জন্যই তৈরী এবং তাঁর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারি।
যীশু বলেছেন,‘‘ আমিই সেই জীবন-রুটি। যে আমার কাছে আসে তার কখনও খিদে পাবে না। যে আমার উপর বিশ্বাস করে তার আর কখনও পিপাসাও পাবে না।’’৩২
আপনি তাঁর সাথে এখনই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী করতে পারেন। আপনি এই পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়েই ঈশ্বর সম্পর্কে এবং মৃত্যুর পর অনন্তজীবন সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে জানতে পারেন। ঈশ্বর আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
‘‘ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।’’৩৩
যীশু ক্রুশে উপর আমাদের পাপ নিজের ওপর তুলে নিলেন। তিনি আমাদের পাপের কারণে শাস্তি ভোগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে করে তাঁর সাথে আমাদের পাপ মধ্যকার বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবে আমাদের পাপের জন্য বেতন দিয়েছেন, তিনি আপনাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করতে চান এবং তিনি চান যেন আপনার সাথে তাঁর সম্পর্কে সৃষ্টি হয়।
যেভাবে আপনি এই সম্পর্ক শুরু করবেন তা এখানে দেওয়া হল।
যীশু বলেছেন,‘‘ দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ঘা দিচ্ছি। কেউ যদি আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব।’’৩৪
এখনই আপনি যীশু খ্রীষ্টকে আপনার জীবনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। কথা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, তিনি আপনার জন্য যা করেছেন এবং আপনাকে যা দিতে চাচ্ছেন সেটার ভিত্তিতে আপনি কীভাবে সাড়াদান করছেন। আপনি হয়ত তাঁকে এমন কিছু বলতে পারেন,‘‘যীশু, তোমাকে বিশ্বাস করি। আমার পাপের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমার কাছে আমাকে ক্ষমা করা এবং এখনই আমার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আমি তোমাকে জানতে চাই এবং তোমাকে অনুসরণ করতে চাই। এখনই তুমি আমার জীবনে এসেছ এবং তোমার সাথে আমার সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ প্রভু।’’
যদি আপনি যীশুকে আপনার জীবনে আসার জন্য অনুরোধ করে থাকেন, তাহলে যাতে আপনি তাঁকে আরও ভালভাবে জানতে পারেন সেজন্য আপনাকে আমরা সাহায্য করতে চাই। যেসকল উপায়ে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি, দয়া করে নিচের লিংকগুলোতে আপনি স্বাধীনভাবেই ঘুরে দেখতে পারেন।
পল ই. লিটিল এর লেখা ওয়াই ইউ বিলিভ থেকে সংকলিত, ভিক্টর বুকস এর দ্বারা প্রকাশিত, গ্রন্থস্বত্ব (সি) ১৯৮৮, এসপি প্রকাশনী, ইনক, উইটন, আইএল ৬০১৮৭। অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে।
পাদটীকাসমূহ: (১)মথি ৭:২৯ (২) মথি ১৬:১৫-১৬ (৩) যোহন ৫:১৮ (৪) যোহন ১০:৩৩ (৫) যোহন ১০:১০ (৬) যোহন ৮:১২ (৭) যোহন ৫:২৪ (৮) যোহন ১০:২৮ (৯) মার্ক ১৪:৬১-৬৪ (১০) যোহন ৮:১৯; ১৪:৭ (১১) ১২:৪৫; ১৪:৯ (১২) ১২:৪৪;১৪:১১ (১৩) মার্ক ৯:৩৭ (১৪) যোহন ১৫:২৩ (১৫) যোহন ৫:২৩ (১৬) যোহন ১০:৩৮ (১৭) যোহন ৮:৪৬ (১৮) ১ম পিতর ২:২২ (১৯) মথি ২৭:৫৪ (২০) যোহন ৯:২৫,৩২ (২১) মার্ক ৪:৪১ (২২) যোহন ১১:৪৮ (২৩) যোহন ১৪:৬ (২৪) যোহন ৮:১২ (২৫) যোহন ১০:২৮ (২৬) মার্ক ৯:৩১ (২৭) যোহন ১০:১৮ (২৮) মথি ২৬:৫২,৫৩ (২৯) প্রেরিত ১:৩ (৩০) যোহন ২০:২৪-২৯ (৩১) যোহন ৮:১২ (৩২) যোহন ৬:৩৫ (৩৩) যোহন ৩:১৬ (৩৪) প্রকাশিত বাক্য ৩:২০